রাষ্ট্রকূট রাজবংশ

অষ্টম শতাব্দীর মধ্যভাগে চালুক্য শক্তির পতনের পর দক্ষিণ ভারতে রাষ্ট্রকূটদের (ইংরেজি: Rashtrakutas) প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়। তারা দুই শতাব্দীর অধিককাল ধরে দাক্ষিণাতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে তাদের আধিপত্য বজায় রাখেন। তাদের বংশপরিচয় বা আদি বাসস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছু বলা সম্ভব নয়। এ সম্পর্কে বিভিন্ন মতবাদ প্রচলিত আছে। (১) নবম শতাব্দীর একটি রাষ্ট্রকূট অনুশাসন লিপিতে তাদের মহাভারত-এর বিখ্যাত যদুবংশীয় বীর সাত্যকি-র বংশধর বলে বর্ণনা করা হয়েছে। রাষ্ট্রকূট সভাকবিরা রাষ্ট্রকূট রাজ তৃতীয় গোবিন্দকে ভগবান কৃষ্ণের সঙ্গে তুলনা করেছেন। (২) অনেকের মতে সম্রাট অশােকের শিলালিপিতে বর্ণিত রথিক বা রাষ্ট্রীকরা হল রাষ্ট্রকূটদের পূর্বপুরুষ। (৩) বর্নেলের মতে তারা অন্ধ্রদেশের তেলেগু রেড্ডি বা কৃষক সম্প্রদায়ভুক্ত। (৪) অনন্ত আলতেকরের মতে, তারা কর্ণাটকের অধিবাসী এবং তাদের মাতৃভাষা কানাড়ি। (৫) ডঃ রমেশচন্দ্র মজুমদার মনে করেন যে, রাষ্ট্রকুট কথাটির অর্থ হল কোনও রাষ্ট্র বা প্রদেশের প্রধান। তারা চালুক্য রাজাদের অধীনে দাক্ষিণাত্যের বিভিন্ন অঞ্চলে শাসনকর্তা হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন। চালুক্য শাসকদের দুর্বলতার সুযােগে খ্রিস্টীয় অষ্টম শতকে তারা দাক্ষিণাত্যে স্বাধীন রাজবংশের প্রতিষ্ঠা করেন। রাষ্ট্রকূট বংশের প্রথম শাসক ছিলেন ইন্দ্র। রাষ্ট্রকূট বংশের রাজধানী ছিল মান্যখেত (বর্তমান কর্ণাটক রাজ্যের গুলবার্গা জেলায়)।

দন্তিদুর্গ (৭৫৩-৭৫৮ খ্রিস্টাব্দ):
  • ইন্দ্রের পর সিংহাসনে বসেন তার পুত্র দন্তিদুর্গ।
  • রাষ্ট্রকূট রাজবংশের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন দন্তিদুর্গ।
  • তিনি মহারাজাধিরাজ উপাধি গ্রহণ করেন।
  • তিনি চালুক্যদের সামন্তরাজা ছিলেন। দ্বিতীয় বিক্রমাদিত্যের সামন্ত হিসেবে ৭৩৮ খ্রিস্টাব্দে গুজরাটে আরব আক্রমণ প্রতিরােধে তিনি উল্লেখযােগ্য ভূমিকা গ্রহণ করেন। বলা হয় যে, আরবদের বিরুদ্ধে তার সাফল্যে সন্তুষ্ট হয়ে দ্বিতীয় বিক্রমাদিত্য তাকে পৃথিবীবল্লভ অভিধায় ভূষিত করেন।
  • দ্বিতীয় বিক্রমাদিত্যের মৃত্যুর পর (৭৪৬ খ্রিঃ) তিনি স্বাধীন রাজা হিসেবে রাজ্যজয় শুরু করেন এবং গুজরাট, মালব, মধ্যপ্রদেশ ও বেরার জয় করেন।
  • তার শক্তি বৃদ্ধিতে আতঙ্কিত চালুক্য রাজ দ্বিতীয় কীর্তিবর্মন তার বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করেন এবং খান্দেশের যুদ্ধে পরাজিত হন। এর ফলে মহারাষ্ট্রের উত্তর ভাগ দন্তিদুর্গের অধিকারে চলে আসে, চালুক্য বংশের অবসান ঘটে এবং রাষ্ট্রকুট বংশ প্রতিষ্ঠিত হয় (৭৫৩ খ্রিঃ)।
প্রথম কৃষ্ণ (৭৫৮-৭৭৩ খ্রিঃ):
  • দন্তিদুর্গের পর সিংহাসনে বসেন তার পুত্র (মতান্তরে খুল্লতাত) প্রথম কৃষ্ণ।
  • তিনি পুনরায় চালুক্য রাজ কীৰ্তিবর্মনকে পরাজিত করে সমগ্র মহারাষ্ট্রে নিজ আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত করেন এবং এর ফলে চালুক্য বংশের পতন ঘটে (৭৬০ খ্রিঃ)।
  • তিনি মহীশূরের গঙ্গরাজা ও বেঙ্গির চালুক্য বংশীয় রাজাকে পরাস্ত করেন । এর ফলে সমগ্র মহারাষ্ট্র এবং মধ্যপ্রদেশ রাষ্ট্রকূটদের অধিকারে আসে।
  • তার আমলের একটি উল্লেখ্যযােগ্য ঘটনা হল ইলােরার বিখ্যাত শিবমন্দির, কৈলাসনাথের মন্দির নির্মাণ।
  • ইলােরার পাহাড় কেটে মন্দিরটি নির্মিত।
দ্বিতীয় গােবিন্দ (৭৭৩-৭৮০ খ্রিঃ):
  • এরপর সিংহাসনে বসেন তার পুত্র দ্বিতীয় গােবিন্দ।
  • তিনি আরামপ্রিয় ও অকর্মণ্য এই নৃপতি নিজ ভ্রাতা দ্রুব-র হাতে শাসনভার অর্পণ করে নিজে আমােদ-প্রমােদে ডুব দেন।
  • প্রথম ধ্রুব ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে উঠতে থাকে। ফলে দ্বিতীয় গোবিন্দ শাসনক্ষমতা থেকে প্রথম ধ্রুবকে সরাতে চাইলে বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। তিনি দ্বিতীয় গোবিন্দকে পরাজিত করে সিংহাসনে বসেন।
প্রথম ধ্রুব (৭৮০-৭৯৩ খ্রিঃ):
  • প্রথম ধ্রুব মহীশূরের গঙ্গ-বংশীয় রাজা, বেঙ্গির চালুক্য-রাজ ও পল্লব-রাজ দন্তিবর্মনকে পরাজিত করে সমগ্র দাক্ষিণাত্যে নিজ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করেন।
  • তিনি উত্তর ভারতেও রাজ্যবিস্তারে উদ্যোগী হন এবং এর ফলে প্রতিহার ও পাল রাজাদের সঙ্গে তার সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। প্রতিহার-রাজ বৎসরাজ ও পালরাজা ধর্মপালকে পরাজিত করে তিনি গাঙ্গেয় উপত্যকায় নিজ আধিপত্য বিস্তার করে দাক্ষিণাত্যে ফিরে আসেন।
তিনি ধ্রুব নিরুপম, ধ্রুব ধারাবর্ষ, শ্রীবল্লভ প্রভৃতি উপাধি গ্রহণ করেন। তার আমলেই রাষ্ট্রকুট শক্তি প্রবল পরাক্রান্ত হয়ে ওঠে।
তৃতীয় গোবিন্দ (৭৯৩-৮১৪ খ্রি:):
  • প্রথম ধ্রুব তার কনিষ্ঠ পুত্র তৃতীয় গোবিন্দকে সিংহাসনে মনোনীত করে যান। একই সাথে তার জ্যৈষ্ঠ পুত্র স্তম্ভকে গঙ্গাদেবীর শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন। এতে স্তম্ভ সন্তুষ্ট ছিলনা। ফলে তিনি বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন, এই কাজে তাকে সাহায্য করেন পল্লববংশীয় রাজারা এবং শিবরাম নামে এক গঙ্গাবংশীয় যুবরাজ। তৃতীয় গোবিন্দ তাকে পরাজিত করেন, এবং পুনরায় গঙ্গাদেবীর শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন।
  • তৃতীয় গোবিন্দ পল্লব রাজ দন্তিবর্মন, বেঙ্গী রাজ চতুর্থ বিষ্ণুবর্মন তার বস্যতা স্বীকার করেন।
  • তিনি প্রতিহার রাজ নাগভট্টকে পরাজিত করে উত্তর ভারতে প্রতিহার শক্তির একচেটিয়া আধিপত্যের সম্ভাবনা দূর করেন।
  • বাংলার পালরাজ ধর্মপাল ও তার প্রতিনিধি কনৌজের চক্রায়ধু তার আনুগত্য মেনে নেন।
  • তৃতীয় গোবিন্দ-র উত্তর ভারতে রাজ্যেবিস্তারের কালে বেঙ্গীর চালুক্য রাজ বিজয়াদিত্য বিদ্রোহ ঘােষণা করেন। তিনি তাকে সিংহাসনচ্যুত করে তার ভাই ভীমকে সিংহাসনে বসান।
  • ইতিমধ্যে দাক্ষিণাত্যের গঙ্গ, পল্লব, চাল, পাণ্ড্য, কেরল প্রভূতি রাজন্যবর্গ রাষ্ট্রকূট বিরােধী শক্তিজােট গঠন করলে তিনি তাঁদের পরাজিত করেন এবং পল্লব রাজধানী কাঞ্চি দখল কৱেন।
  • সিংহলের রাজাও তার আনুগত্য মেনে নেন।
  • তাকে রাষ্ট্রকূট বংশের সর্বশ্রেষ্ট রাজা হিসেবে গণ্য করা যায়।
প্রথম অমােঘবর্ষ (৮১৪-৮৭৭ খ্রিঃ):
  • তৃতীয় গােবিন্দের মৃত্যুর পর তার নাবালক পুত্র প্রথম অমােঘবর্ষ সিংহাসনে বসেন।
  • এই সময় তারা অভিভাবক হিসেবে রাজকার্য পরিচালনা করতেন তৃতীয় গোবিন্দর ভ্রাতুষ্পুত্র এবং গুজরাট ও মালবের শাসনকর্তা কর্ক তিনি
  • প্রথম অমােঘবর্ষ নিজ হাতে ক্ষমতা নেন ৮৩০ খ্রিস্টাব্দ।
  • তিনি নাসিক থেকে মান্যখেটে রাজধানী স্থানান্তরিত করেন।
  • তিনি বেঙ্গীর চালুক্যদের যুদ্ধে পরাজিত করেন, কিন্তু মহীশূরের গঙ্গ রাজাদের বিরুদ্ধে কুড়ি বছর যুদ্ধ চালিয়েও তিনি পরাজিত হন।
  • তার রচিত রত্নমালিকা ও কবিরাজমার্গ কন্নড় ভাষায় দুটি উল্লেখযােগ্য গ্রন্থ।
  • তিনি নিজে ব্রাহ্মণ্যধর্মাবলম্বী হলেও জৈন ধর্মের প্রতি তার গভীর অনুরাগ ছিল। সংস্কৃত গ্রন্থ আদিপুরাণ-এর লেখক জৈন কবি জীনসেন এবং গণিতসার সংগ্ৰহ নামক গ্রন্থের লেখক মহাবিজয়াচার্য তার রাজসভায় সম্মানীয় অতিথি ছিলেন।
  • জীনসেনের পার্শ্বঅভুদ্যয় গ্রন্থটি তারই পৃষ্ঠপােষকতায় রচিত হয়।
  • অমােঘবৃত্তি নামক ব্যাকরণ গ্রন্থের রচয়িতা শকটায়ন তার রাজসভা অলঙ্কৃত করতেন।
  • আরব পর্যটক সুলেমানের মতে তিনি বিশ্বের চারজন শ্রেষ্ঠ রাজার অন্যতম ছিলেন। বাকি তিনজন হলেন চিনের সম্রাট, বাগদাদের খলিফা ও কনস্টান্টিনােপলের সুলতান।
দ্বিতীয় কৃষ্ণ (৮৭৭-৯১৪ খ্রিঃ):
  • অমােঘবর্ষের পর তার পুত্র দ্বিতীয় কৃষ্ণ সিংহাসনে বসেন।
  • তার আমলে বেঙ্গীর চালুক্যরাজা তৃতীয় বিজয়াদিত্য কলচুরীর রাজার সহায়তায় রাষ্ট্রকুট সাম্রাজ্য আক্রমণ করে। প্রাথমিক যুদ্ধে দ্বিতীয় কৃষ্ণ পরাজিত হলেও অবশেষে তিনি চালুক্যদের পরাজিত করেন এবং বিজয়াদিত্যের উত্তরাধিকারী ভীমকে বন্দি করেন ও তাকে নিজের সামন্তরাজায় পরিণত করেন।
  • দ্বিতীয় কৃষ্ণের আমলের অপর উল্লেখযােগ্য ঘটনা হল প্রতিহাররাজ ভােজের সাথে যুদ্ধ। এই যুদ্ধে দ্বিতীয় কৃষ্ণ পরাজিত হন এবং মালোব ও গুজরাট হাতছাড়া হয়।
  • বৈবাহিক সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও দ্বিতীয় কৃষ্ণ চোল রাজ্য আক্রমণ করেন, কিন্তু যুদ্ধে পরাজিত হয়ে অপমানজনক সন্ধি স্বাক্ষরে বাধ্য হন।
তৃতীয় ইন্দ্র (৯১৪-৯২২ খ্রিঃ):
  • দ্বিতীয় কৃষ্ণের পর তার পৌত্র তৃতীয় ইন্দ্র সিংহাসনে বসেন।
  • তিনি রাষ্ট্রকুট বংশের লুপ্ত গৌরব কিছুটা পুনরুদ্ধারে সক্ষম হন।
  • তিনি প্রতিহার রাজ মহীপালকে পরাজিত করে কনৌজ নগরী ধ্বংস করেন। দাক্ষিণাত্যে প্রত্যাবর্তনের পথে তিনি উজ্জয়িনী দখল করেন।
  • দক্ষিণে চালুক্য রাজ চতুর্থ বিজয়াদিত্যেকে পরাজিত ও নিহত করেন।
দ্বিতীয় অমােঘবর্ষ (৯২২-৯৩০ খ্রি:):
  • তৃতীয় ইন্দ্র মৃত্যুর পর তার পুত্র দ্বিতীয় অমােঘবর্ষ সিংহাসনে বসেন।
  • চতুর্থ গোবিন্দ তাকে হত্যা করেন।
চতুর্থ গোবিন্দ (৯৩০-৯৩৬ খ্রি:):
  • চতুর্থ গোবিন্দ ছিলেন দ্বিতীয় অমােঘবর্ষের ছোট ভাই।
  • তাঁর শাসনকালে কনৌজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছিল।
  • বেঙ্গীর চালুক্যরা তাঁকে পরাজিত করে এবং তার অনেক অঞ্চল হারিয়ে যায়।
  • চতুর্থ গোবিন্দ কন্নড় কবি রবিনাগভট্টের পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন।
তৃতীয় অমােঘবর্ষ (৯৩৬-৯৪০ খ্রি:):
  • চতুর্থ গোবিন্দর খুল্লতাত তৃতীয় অমােঘবর্ষ গোবিন্দকে ক্ষমতাচ্যুত করে সিংহাসনে বসেন।
  • তিনি অন্ধ্রের ভেমুলাবাদার সামন্ত রাজা অরিকেসরি এবং গোবিন্দ চতুর্থের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী অন্যান্য ভ্যাসালদের সহায়তায় ক্ষমতায় এসেছিলেন।
  • তাঁর আগ্রাসী মনোভাব এবং ধর্মীয় মেজাজ তাকে তাঁর সাম্রাজ্যের শাসনে কোন আগ্রহ দেখাতে দেয়নি, তার মূল শাসনক্ষমতা ছিল পুত্র তৃতীয় কৃষ্ণের হতে।
  • তাঁর বিয়ে হয়েছিল ত্রিপুরীর কালাচুরি রাজবংশের রাজকন্যা কুন্দকাদেবীর সঙ্গে।
  • তাঁর কন্যা পশ্চিম গঙ্গার রাজা দ্বিতীয় বুতুগাকে বিয়ে করেছিলেন, যাকে যৌতুক হিসাবে একটি বিশাল অঞ্চল দেওয়া হয়েছিল।
তৃতীয় কৃষ্ণ (৯৪০-৯৬৮ খ্রি:):
  • রাষ্ট্রকুট বংশের শেষ উল্লেখযােগ্য রাজা হলেন তৃতীয় কৃষ্ণ।
  • তিনি মহীশূর পুনর্বার জয় করেন।
  • তিনি পল্লবদের রাজধানী কাঞ্চি ও চোল নগরী তাঞ্জর অধিকার করেন এবং কেরল ও পাণ্ড্যদের পরাজিত করে রামেশ্বর সেতুবন্ধে বিজয়স্তম্ভ প্রােথিত করেন।
  • উত্তরে প্রতিহার রাজ মহীপালকে পরাজিত করে তিনি কালাঞ্জর ও চিত্রকুট দখল করেন।
  • ৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে পুনর্বার উত্তর ভারতে অভিযান চালিয়ে তিনি মালব, উজ্জয়িনী ও বুন্দেলখণ্ড জয় করেন।
  • সিংহলের রাজাও তার বশ্যতা মেনে নেন।
  • তিনি নিজেকে সকল দক্ষিণ দিগাধিপতি বলে অভিহিত করেছেন।
  • তৃতীয় কৃষ্ণের রাজত্বকালে হলায়ুধ রচনা করেন কবিরহস্য।
কোট্টিগ অমোঘবর্ষ (৯৬৮-৯৭২ খ্রি:)
  • রাষ্ট্রকুট বংশের পরবর্তী শাসকগণ ছিল কোট্টিগ অমোঘবর্ষ ।
  • তিনি নিত্যবর্ষ উপাধি নেন।
চতুর্থ অমােঘবর্ষ বা কার্ক(৯৭২-৯৭৩ খ্রি:)
  • ৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে কল্যাণীর চালুক্য বংশীয় রাজা দ্বিতীয় তৈলপ বা তৈল শেষ রাষ্ট্রকুট রাজ চতুর্থ অমােঘবর্ষ বা কার্ক-কে পরাজিত করলে রাষ্ট্রকুট বংশের বিলােপ ঘটে।
শাসনব্যবস্থা:
  • রাষ্ট্রকুটশাসকদের প্রত্যক্ষ শাসিত অঞ্চলগুলি প্রদেশ, বিষয় ও ভুক্ত এই তিনভাগে বিভক্ত ছিল।
  • প্রদেশ বা রাজ্যের শাসনকর্তাকে বলা হত রাষ্ট্রপতি। নিজ এলাকায় আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখা, সামরিক বাহিনীকে নিয়ন্ত্রিত করা প্রভৃতি কাজ রাষ্ট্রপতিকে করতে হত।
  • বিষয়-এর প্রধান শাসককে বলা হত বিষয়পতি, গ্রামগুলির শাসনের ভার ছিল গ্রাম প্রধানের উপর। শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য গ্রাম প্রধানের অধীনে একটি সুশিক্ষিত লাঠিয়াল বাহিনী থাকত। গ্রাম মহাজন বা গ্রাম মহাত্তার নামক গ্রামের বয়ােজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিদের পরামর্শক্রমে গ্রাম প্রধান গ্রাম শাসন করতেন।
  • শাসনব্যবস্থার সর্বনিম্ন একক ছিল গ্রাম।
  • রাষ্ট্রের আয়ের প্রধান উৎস ছিল ভূমি রাজস্ব। উৎপন্ন ফসলের এক চতুথাংশ কর হিসেবে গৃহীত হত। এছাড়া জলকর, খনিজ দ্রব্যের উপর কর প্রভৃতিও আদায় করা হত।
  • দেশগ্রামুক্ত নামে রাজস্ব কর্মচারীদের উপর কর আদায়ের ভার ন্যস্ত থাকত।
  • রাষ্টকুট সাম্রাজ্যে সামন্তশাসনেরও অস্তিত্ব ছিল। শাসনতান্ত্রিক ব্যাপারে সামন্তরাজাগণ ছিলেন স্বাধীন। তারা রাষ্ট্রকুটরাজাদের নিয়মিত কর দিতেন এবং যুদ্ধের সময় সেনাবাহিনী দিয়ে সাহায্য করতেন।